খেলাধুলার দুর্ঘটনা

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - NCTB BOOK

দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান নানা রকম দুর্ঘটনা জীবনের গতিপথে সাময়িক বাধার সৃষ্টি করে। এসব দুর্ঘটনা নানাভাবে ঘটতে পারে। খেলাধুলা বা ব্যায়াম করার সময় আকস্মিকভাবে পায়ে ব্যথা পাওয়া, পা মচকে বা হাড় ভেঙ্গে যাওয়া, কেটে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনা অকস্মাৎ ঘটে। তখন আশপাশে কোনো ডাক্তার পাওয়া যায় না। এ সময় রোগীকে তাৎক্ষণিক প্রতিবিধান দিতে হয়। সেজন্য আমাদের প্রাথমিক প্রতিবিধান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরি। প্রাথমিক প্রতিবিধানের মাধ্যমে আমরা সুস্থজীবন যাপনে সক্ষম হব।

 

এ অধ্যায় শেষে আমরা-
 

  • প্রাথমিক প্রতিবিধানের গুরুত্ব ও পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করতে পারব।
  • প্রাথমিক প্রতিবিধানের উপকরণসমূহের বর্ণনা দিতে পারব।
  • প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীর গুণাবলি বর্ণনা করতে পারব।
  • চামড়া ছড়ে যাওয়া ও ফুলে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার বর্ণনা করতে পারব।
  • মচকানো ও হাড়ভাঙ্গার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক প্রতিবিধান বর্ণনা করতে পারব। 
  • সন্ধিচ্যুতি ও লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • ক্ষতের প্রকারভেদ বর্ণনা করতে পারব। ক্ষতের প্রতিকার করতে পারব।
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়া ও মাংসপেশিতে টান ধরার প্রাথমিক প্রতিবিধান ব্যাখ্যা করতে পারব। 
  • পানিতে ডুবে গেলে তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব।
  • কেউ পানিতে ডুবে গেলে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক প্রতিবিধান দিতে পারব।
  • চামড়া ছড়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, মচকানো ও হাড়ভাঙ্গা, সন্ধিচ্যুতি ও লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া, ক্ষত, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাসলপুল, ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিবিধান প্রদানে সক্ষম হব।
  • প্রাথমিক প্রতিবিধানের মাধ্যমে সুস্থজীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ হব।
Content added By

প্রাথমিক প্রতিবিধানের গুরুত্ব, পদ্ধতি ও উপকরণ

প্রাথমিক প্রতিবিধান হলো চিকিৎসা শাস্ত্রের অন্তর্গত একটি প্রাথমিক বিভাগ। এই বিদ্যায় অভিজ্ঞ একজন প্রতিবিধানকারী কেউ দুর্ঘটনায় বা অসুস্থ হলে তাকে সঠিক পদ্ধতিতে ও যত্ন সহকারে প্রাথমিক প্রতিবিধান দিতে পারে। সম্পূর্ণ চিকিৎসা করা প্রতিবিধানের উদ্দেশ্য নয়। কারণ প্রতিবিধানকারী চিকিৎসক নন। প্রতিবিধানকারী ডাক্তার আসার আগ পর্যন্ত বা হাসপাতালে স্থানান্তর করার আগ পর্যন্ত অসুস্থ ব্যক্তির প্রাণ রক্ষা করা, সুস্থ করার পথ সুগম করা এবং রোগীর অবস্থা যেন আরও খারাপ না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে জীবনরক্ষার ভার নেওয়াই হলো প্রাথমিক প্রতিবিধানের উদ্দেশ্য। First Aid শব্দটি ভাঙ্গলে সহজে প্রাথমিক প্রতিবিধান কী তা বোঝা যায় ৷
 

F-Fast (দ্রুত): প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীকে দ্রুত কাজ সম্পাদন করতে হবে। অন্যথায় রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে ।
 

I-Investigation (অনুসন্ধান) : রোগীর অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক সবকিছু অনুসন্ধান করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
 

R-Relief (আরাম) : সর্বপ্রথম রোগীর যন্ত্রণা লাঘব করে আরামের ব্যবস্থা করতে হবে।
 

S-Sympathy (সহানুভূতি) : রোগীকে সহানুভূতির সাথে দেখতে হবে। তাহলে সে অনেকটা সুস্থ বোধ করবে। 

 T-Treatment (চিকিৎসা) : প্রতিবিধানকারী দ্রুত তার সাধ্যমতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। A-Arrangement (ব্যবস্থা ) রোগীকে প্রাথমিক প্রতিবিধানের পর ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। 

I-Immediate (তাৎক্ষণিক) : তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়ে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
 

D-Disposal (অপসারণ করা) : দুর্ঘটনা স্থান থেকে রোগীকে সরাতে হবে অর্থাৎ মারাত্মক না হলে বাড়িতে প্রয়োজন হলে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। প্রাথমিক প্রতিবিধানের পদ্ধতি : প্রতিটি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে
হয়। 

প্রাথমিক প্রতিবিধানের পদ্ধতিগুলো হলো-
১. দ্রুত অথচ ঠান্ডা মাথায় আগের কাজ আগে ও পরের কাজ পরে করতে হবে।
২. রোগীকে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে হবে।
৩. রোগীর জ্ঞান আছে কিনা দেখতে হবে।
৪. শ্বাস-প্রশ্বাসের বিঘ্ন দেখা দিলে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. রক্তক্ষরণ থাকলে তৎক্ষণাৎ বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে।
৬. শক দেখা দিলে তার প্রতিবিধান আগে করতে হবে।
৭. নাড়ির গতির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।
৮. রোগীর জ্ঞান না থাকলে শরীরের কাপড়-চোপড় আলগা করে দিতে হবে।

৯. রোগী ও তার সাথী বা সকলকে আশ্বাস ও সাহস দিতে হবে।
১০. দর্শক যেন বেশি ভিড় করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

১২. চোখের তারা অস্বাভাবিক কিনা, মুখ বিবর্ণ কিনা, মাথায় আঘাত আছে কিনা এবং রোগীকে উত্তাপ দিতে হবে কিনা এসবের দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
১৩. যত শীঘ্র সম্ভব ডাক্তারের নিকট হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাথমিক প্রতিবিধানের উপকরণ
 

নিম্নলিখিত উপকরণগুলো প্রাথমিক প্রতিবিধান করার সময় প্রয়োজন হয়—
১. জীবাণুমুক্ত তুলা বা গজ ২. লিন্ট ৩. স্প্লিন্ট ৪. প্যাড ৫. কাঁচি ৬. ত্রিকোণ ও রোলার ব্যান্ডেজ ৭. ডেটল ৮. প্যাড, ফ্লাট প্যাড ও রিং প্যাড, ৯. আয়োডিন ১০. বেনজিন ১১. একটি চিমটা ১২. সেফটিপিন, ১৩. ব্লেড, সেলাই করার জন্য সুচ, ১৪. স্পিরিট ১৫. লিউকো প্লাস্টার ১৬. আই প্যাড ১৭. এক টিউব বারনল ১৮. একটি ঔষধের ট্রে ১৯. একটি সিরিঞ্জ ২০. একটি ফার্স্ট এইড বক্স।

Content added || updated By

প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীর গুণাবলি

একজন প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীর নিম্নলিখিত গুণাবলি থাকা প্রয়োজন—
 

১. পর্যবেক্ষণ জ্ঞান : প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী রোগীর আঘাতের কারণ ও চিহ্ন সহজেই পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
 

২. বিচক্ষণতা : প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী কোনো অপ্রোেয়াজনীয় কাজ না করে সহজে রোগীর লক্ষণাদি দেখে আহত জায়গা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ ও সকলের বিশ্বাসভাজন হতে পারে।
 

৩. অভিজ্ঞতা : প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী হাতের কাছে যে সমস্ত জিনিস পাবে তা দিয়েই সে প্রতিবিধানের কাজ চালাতে পারেন সেরকম অভিজ্ঞ হতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে যেন বেশি না হয় ৷
 

৪. কর্মদক্ষতা : প্রতিবিধানকারী অযথা রোগীকে যেন কষ্ট না দেয়। অভিজ্ঞতার আলোকে অত্যন্ত সহজ ও নিপুণভাবে কাজটি সম্পন্ন করবে।
 

৫. সঠিক উপদেশ দান : প্রতিবিধানকারীকে ও তার নিকটস্থ লোকদেরকে উপস্থিত কর্তব্য সম্বন্ধে সঠিক উপদেশ বা নির্দেশ দেবেন ।
 

৬. সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ : প্রাথমিক প্রতিবিধানকারীও আঘাতের গুরুত্ব বুঝে আগের কাজ আগে ও পরের কাজ পরে করবে।
 

৭. আত্মবিশ্বাস : প্রতিবিধানকারী প্রথমে অসুবিধা হলেও সে যেন প্রতিবিধানের কাজ আত্মবিশ্বাসের সাথে শেষ করে।
 

৮. সহানুভূতি : প্রতিবিধানকারী রোগীর প্রতি কখনো কঠোর হবে না। রোগী যেন কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ রেখে অন্যদের সাহস দিতে হবে।

 

Content added || updated By

চামড়া ছড়ে যাওয়া,মাংসপেশিতে টান ও ফুলে যাওয়া

দৈনন্দিন চলার পথে ও খেলাধুলা করার সময় আমরা যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় পড়তে পারি। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে কোনো কোনো সময় দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা সম্ভব। আর যদি দুর্ঘটনা ঘটেই যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। খেলাধুলা করার সময় আমরা বিভিন্নভাবে দুর্ঘটনায় পড়তে পারি ।
 

দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত পন্থাগুলো মেনে চলা প্রয়োজন
১. খেলাধুলা ও ব্যায়াম করার পূর্বে শরীর ভালোভাবে গরম করে খেলার উপযোগী করে নিতে হবে।
২. প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যায়াম বা খেলাধুলা করা উচিত নয়। ৩. ব্যায়াম করার সময় নিজের উচ্চতা ও ওজন অনুসারে সঙ্গী বেছে নিতে হবে।
৪. পিচ্ছিল, ভেজা, ও ইট পাটকেলযুক্ত মাঠে খেলা করা উচিত নয়।
৫. গাছ বা বৈদ্যুতিক তারের কাছে খেলাধুলা করা উচিত নয়।
এগুলো মেনে চললে দুর্ঘটনা অনেকটাই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
 

১. চামড়া ছড়ে যাওয়া : হাতুড়ি, পাথর বা কোনো ভোঁতা জিনিসের আঘাতে বা খেলার সময় বুটের আঘাতে চামড়া ছড়ে যেতে পারে। চামড়া ছড়ে গেলে ঐ স্থানটি থেতলানো, রক্তজমা ও কালশিটেযুক্ত হয়। প্রাথমিক প্রতিবিধান -
 

১. ছড়ে যাওয়া থেঁতলানো জায়গায় ঠান্ডা পানি বা বরফ লাগাতে হবে।
২. পরিষ্কার তোয়ালে বা কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে বেঁধে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে পুনরায় ভিজিয়ে দিতে হবে।
৩. রক্ত বের হলে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে ।
৪. জীবাণুমুক্ত তুলা দিয়ে জমাট রক্ত মুছে মলম লাগাতে হবে।
৫. প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে পাঠাতে হবে।
 

২. মাংসপেশিতে টান ধরা : খেলাধুলা করার সময় বা ভারী কোনো জিনিস তোলার সময় মাংসপেশিতে টান লেগে মাংসপেশির আঁশ ছিঁড়ে ব্যথা অনুভূত হয় ও চলতে গেলে খুব কষ্ট হয়। কোনো কোনো সময় আহত স্থানে ফুলে ওঠে এবং কালশিরা পড়ে যায়। এ অবস্থাকে মাসলপুল বা মাংসপেশিতে টান বলে। এরূপ হলে আহত স্থানটিকে বিশ্রাম দিয়ে বরফ লাগাতে হবে। ২৪ ঘণ্টা পর গরম পানিতে বোরিক পাউডারের কমপ্রেস প্রয়োগ করতে হবে। অ্যাথলেটিকস ও সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের মাংসপেশিতে টান ধরে বেশি।
 

৩. ফুলে যাওয়া : ফুটবল খেলার সময় বুটের আঘাতে, বক্সিং খেলার সময় মুষ্টির আঘাতে বা পড়ে গিয়ে আঘাত লেগে শরীরের কোনো স্থান ফুলে যেতে পারে। এর প্রথম কাজই হলো বরফ লাগানো। কিছুক্ষণ বরফ লাগালে ফোলা আস্তে আস্তে কমে যাবে। এর পরেও যদি ব্যথা থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

Content added By

সন্ধিচ্যুতি , মচকানো ও হাড়ভাঙ্গা এবং লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়া

১. সন্ধিচ্যুতি : শরীরের একটি অস্থি/হাড় অন্য হাড়ের সাথে যেখানে মিলিত হয়েছে ঐ স্থানকে সন্ধিস্থান বলে। অর্থাৎ দুই বা ততোধিক হাড়ের সংযোগ স্থানের নাম সন্ধি। এই সন্ধির স্থান থেকে যদি হাড়ের বিচ্যুতি ঘটে তাকে সন্ধিচ্যুতি বলে। কাঁধ, কনুই, কব্জি, বৃদ্ধাঙ্গুল, নিম্ন চোয়াল, হাঁটু ও পায়ের গোড়ালি ইত্যাদির সন্ধিস্থানের সন্ধিচ্যুতি ঘটতে পারে। অনেক সময় সন্ধিচ্যুতি ও হাড়ভাঙ্গা একই সময়ে হয়ে থাকে।
 

সন্ধিচ্যুতির লক্ষণ : ১. সন্ধিস্থান ফুলে যাওয়া, ২. সন্ধিস্থানে ব্যথা অনুভব করা, ৩. সন্ধিস্থান নড়াচড়া করানো যায় না, ৪. সন্ধিস্থানের হাড় সরে গিয়ে বিকৃত রূপ ধারণ করা।
 

সন্ধিচ্যুতির প্রাথমিক প্ৰতিবিধান
১. আহত অঙ্গ যথাসম্ভব আরামদায়ক অবস্থায় রাখতে হবে।
২. আহত অঙ্গ নড়াচড়া করা যাবে না।
৩. সংযোগ বিচ্যুতি অস্থি দুটিকে সংযোগ দিতে হবে বা সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
৪. সন্ধিচ্যুতর স্থানে ভেজা কাপড় বা বরফ লাগাতে হবে।
৫. প্রয়োজনে হাড়ভাঙ্গার ব্যান্ডেজ ব্যবহার করবে।
৬. রোগীর শক লাগলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. হাড়ভাঙ্গার সন্দেহ হলে হাড়ভাঙ্গার ব্যান্ডেজ করতে হবে।
৮. রোগীকে যথাসম্ভব দ্রুত ডাক্তারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। 

 

২. মচকানো ও হাড়ভাঙ্গা
 

২.১ অস্থি বা হাড়ের জোড়া লাগানোর স্থানে শক্ত লিগামেন্ট হাড়ের জোড়াকে একসাথে রাখে। কোনো কারণে যদি এই লিগামেন্ট টানটান হয় কিংবা ছিঁড়ে যায় তাহলে হাড়ের সন্ধিস্থলে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং আহত স্থানের চারপাশ ফুলে ওঠে। একে অস্থিসন্ধির মচকানো বলে। খেলাধুলা বা ব্যায়ামের সময় মচকালে স্থানটিকে সবচেয়ে আরামদায়ক অবস্থানে রাখতে হবে। এরপর তুলা বেশ পুরু করে আহত স্থানের উপরে ও নিচে দিয়ে শক্ত করে ব্যান্ডেজ করতে হবে।
 

২.২ হাড়ভাঙ্গা : শরীরের কোনো হাড় ভেঙ্গে গেলে একে হাড় ভাঙ্গা বা Fracture বলে। হাড়ভাঙ্গা নানা প্রকার হতে পারে। যেমন- ক. সাধারণ হাড়ভাঙ্গা খ. কম্পাউন্ড হাড়ভাঙ্গা গ. জটিল হাড়ভাঙ্গা।
 

২.২.১ সাধারণ হাড়ভাঙ্গা : এই হাড়ভাঙ্গা শরীরের অভ্যন্তরে ঘটে। প্রথমে হাড়ের দুই মাথা সোজা করে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। তারপরে স্প্লিন্ট দিয়ে বেঁধে অনড় করতে হবে।
 

২.২.২ কম্পাউন্ড ফ্রাকচার : একে উন্মুক্ত ফ্রাকচারও বলে। কারণ এই ফ্রাকচারের ভাঙ্গাহাড় চামড়া ভেদ করে শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে। ভাঙ্গাহাড় যতটা সম্ভব সোজা করে শক্তভাবে ব্যান্ডেজ করতে হবে যেন ঐ স্থান অনড় থাকে।
 

২.২.৩ কমপ্লিকেটেড ফ্রাকচার : এই ফ্রাকচারের ভাঙ্গা হাড়ের প্রান্ত শরীরের কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেহ যথা- কিডনি, লিভার, ফুসফুস বা কোনো রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এছাড়াও আরও কয়েক প্রকার হাড়ভাঙ্গা রয়েছে, যেমন— S. কমিনিউটেড- হাড় ভেঙ্গে কয়েক টুকরা হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়।
 

২. ইমপ্যাক্টেড— যেখানে হাড়ের ভাঙ্গা প্রান্তদ্বয় পরস্পর সংবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
 

৩. গ্রিনস্টিক— বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে হাড় না ভেঙ্গে কেবল চির খেয়ে যায়। কচি নিম ডাল খানিকটা দুমড়ে ছেড়ে দিলে যেমন হয় ৷
 

হাড় ভেঙ্গে গেলে করণীয়-
১. সাথে সাথে রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কারণ রোগীকে তৎক্ষণাৎ স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না ।
২. আঘাতপ্রাপ্ত স্থানকে অনড় করতে হবে যাতে নড়াচড়া করতে না পারে।
৩. স্প্লিন্ট ব্যবহার করে আহত অঙ্গ অনড় করতে হবে।
৪. রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
 

৩. লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া : লিগামেন্ট জয়েন্টের সাথে সম্পৃক্ত। জয়েন্টে লিগামেন্ট, টেনডন ও মেমব্রেন দ্বারা বেষ্টিত। চ্যাপ্টাজাতীয় বন্ধনীর নাম লিগামেন্ট। লিগামেন্ট দুই হাড়ের নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। এদের উপরে আছে টিস্যুর বন্ধনী ফলে সংযোগস্থানটি আরও মজবুত করেছে। কখনো যদি অসমান্তরাল জায়গায় পা পড়ে, বাস থেকে নামার সময় জয়েন্টে ঝাঁকি লাগে বা দৌড়ের সময় জয়েন্টে কোনো কারণে আঘাত লাগলে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়। আহত স্থানটি ফুলে যায় ও ব্যথা অনুভূত হয়। ঐ অঙ্গ নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়। সাথে সাথে বরফ লাগাতে হবে এবং বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে ডাক্তারের কাছে পাঠাতে হবে।

Content added By

ক্ষত, ক্ষতের প্রকাভেদ ও প্রতিকার

শরীরের কোনো তন্তু ছিন্ন অথবা দুই বা ততোধিক অংশে বিভক্ত হলে বা তন্তু ছিদ্র হলে তাকে ক্ষত বলে। সাধারণভাবে ত্বক কেটে রক্তপাত হলে তাকেও ক্ষত বলে। ক্ষত পাঁচ প্রকার- S. পিষ্ট ক্ষত (Confused wound)। ২. ছিন্ন ভিন্ন ক্ষত (Lacerated wound)। ৩. কর্তনজনিত ক্ষত (Incised wound)। ৪. বিদ্ধ ক্ষত (Punctured wound) । ৫. মিশ্রজাতীয় ক্ষত (Mixed wound)। 

১. পিষ্ট ক্ষত : মানুষের দেহে সূক্ষ্মভাবে গ্রথিত কোষসমূহ ভারী বস্তুর আঘাতের ফলে চামড়ার কোনো ক্ষতি না হয়ে অন্তঃস্থ ক্যাপিলারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হয়। কিন্তু সেই রক্ত বাইরে বেরোতে না পেরে ভিতরে জমে থাকে তাকে পিষ্ট ক্ষত বলে। এই ধরনের ক্ষতে দৃশ্যমান রক্তপাত হয় না। 

২. ছিন্নভিন্ন ক্ষত : জন্তু জানোয়ারের আক্রমণে, মেশিনে থেঁতলালে ও গোলাগুলির আঘাতে যে ক্ষত হয় তাকে ছিন্নভিন্ন ক্ষত বলে। ক্ষতগুলো অসমান বা বিক্ষিপ্তভাবে থাকে।
 

৩. কর্তনজনিত ক্ষত : কোনো ধারালো অস্ত্র যেমন- ব্লেড, ক্ষুর, ছুরি, বঁটি, ভাঙ্গা কাচ দ্বারা কেটে যে ক্ষত হয় তাকে কর্তনজনিত ক্ষত বলে। এই ধরনের ক্ষতে ত্বক ও রক্তনালি মসৃণভাবে কেটে যায় এবং অবিরামভাবে রক্তপাত হয় সহজে বন্ধ করা যায় না ।
 

৪. বিদ্ধক্ষত : ক্ষতটা গভীর হয়। সে তুলনায় মুখের পরিসর বড় হয় না এ ক্ষতকে বিদ্ধ ক্ষত বলে। যেমন— সুচ, পেরেক, ছুরি, তার ও তারকাটা ইত্যাদি দ্বারা এ ক্ষত হয়। রক্তপাত প্রচুর হতে পারে নাও পারে।

৫. মিশ্রক্ষত : উপরে বর্ণিত একাধিক ক্ষত একত্র মিলে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তাকে মিশ্র ক্ষত বলে। যেমন- গুলির ক্ষত, ক্ষতের মুখের পরিসর ছোট এবং অভ্যন্তরে কতটা গভীর তা দেখে বোঝা যায় না। অপর দিকে যেখান দিয়ে গুলি বের হয়েছে সে স্থান বড় ও আকারে অসমানভাবে ক্ষত থাকে। এই ক্ষতটি একদিকে বিদ্ধক্ষত অপর দিকে ছিন্নভিন্ন ক্ষত। দুটি মিলিত হয়ে মিশ্রজাতীয় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। 

ক্ষতের প্রাথমিক প্রতিবিধান-
১. রোগীকে শুইয়ে দিতে হবে যেন রোগী সহজ ও নিশ্চলভাবে শুয়ে থাকতে পারে ।
২. ক্ষত স্থানকে হার্ট লেভেল বা হৃৎপিণ্ডের সমতার উপরে রাখতে হবে যাতে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত চলাচল কমে রক্ত পড়া থেমে যায় ৷
৩. আহত হওয়ার সাথে সাথে আহত স্থানে বরফ লাগাতে হবে।
৪. রোগী যথাসম্ভব কম নড়াচড়া করবে।
৫. ক্ষতস্থান এন্টিসেপ্টিক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৬. রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ চাপ দিতে হবে । 

৭. ক্ষতস্থানে কিছু শক্তভাবে ঢুকলে তা তুলে ফেলতে হবে।
৮. ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধলে উক্ত জমাট রক্ত সরাতে চেষ্টা করবে না।
৯. শক পেলে প্রথমে তার চিকিৎসা করতে হবে।
১০. ক্ষতস্থানে জীবাণুমুক্ত প্যাড ব্যবহার করতে হবে।

১১. আহত অঙ্গকে ব্যান্ডেজ বেঁধে স্থির রাখতে হবে। 

১২. কোনো উত্তেজক দ্রব্য বা পানীয় পান করতে দেওয়া যাবে না। 

১৩. দ্রুত রোগীকে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে পাঠাতে হবে। 

একজন রোগীর ক্ষত চিকিৎসা করতে গেলে প্রতিবিধান করার কিছু জ্ঞান থাকা দরকার। 

ক. কীভাবে কেটেছে, তা কোন পর্যায়ে পড়ে, কর্তনজনিত ক্ষত/ছিন্নভিন্ন ক্ষত, পিষ্টক্ষত না বিদ্ধক্ষত ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত হতে হবে। 

খ. প্রথমে করণীয় ঠিক করে নেওয়া। রক্তক্ষরণ হলে প্রথমে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা করা। তারপর ইনফেকশন যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করা। শক লাগলে তার প্রতিবিধান করা। 

গ. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে যথারীতি ড্রেসিংয়ের ব্যবস্থা করা, রক্তক্ষরণ থাকলে তা বন্ধ করা। সেপটিক যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা। Toxoid Injection নিতে বলা ইত্যাদি।

ঘ. শক লাগলে প্রথমে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চালু করা । 

ঙ. রোগীর অবস্থা বুঝে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

 

Content added By

নাক দিয়ে রক্ত পড়া, পানিতে ডুবে যাওয়া , উদ্ধার পদ্ধতি ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস প্রদান

১. নাক দিয়ে রক্ত পড়া : খেলাধুলা করার সময় সামান্য আঘাত লাগলেই নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। বিশেষ করে
বক্সিং খেলার সময় এ দুর্ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। ক. প্রথমে রোগীকে চেয়ারে বসিয়ে বা চিৎ করে শুইয়ে মুখ পিছনের দিকে সামান্য হেলিয়ে রাখতে হবে।
খ. মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে বলতে হবে।
গ. নাক হালকাভাবে চেপে ধরে রাখতে হবে।
ঘ. জমাট বাঁধা রক্ত সরাতে হয় না, এতে রক্ত আরও বেশি বের হয়।
ঙ. বরফ বা ঠান্ডা পানি লাগালে রক্ত পড়া তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়।
 

২. পানিতে ডোবা : আমাদের চারপাশে অসংখ্য ডোবা, নালা, পুকুর রয়েছে। সেজন্য সকলেরই সাঁতার জানা দরকার। সাঁতার না জানলে কখনোই পানিতে নেমে গোসল করা উচিত নয়। পা পিছলে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পানি উপরে তুলে গোসল করলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। যদি কেউ পানিতে পড়ে যায়, সাথে সাথে ভাসমান কোনো কিছু পানিতে ছুড়ে দিয়ে বা সাঁতরিয়ে তাকে উদ্ধার করতে হবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে রোগী যেন উদ্ধারকারীকে জড়িয়ে ধরে তার জীবন বিপন্ন না করে। রোগী যদি পানি খায় তাহলে পানি দ্রুত বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে শ্বাসনালিতে পানি ঢুকে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ডুবে যাওয়া রোগীকে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা নিতে হবে—
 

শিশু হলে
ক. পায়ের গোড়ালি উঁচু করে ধরতে হবে। মাথা নিচের দিকে থাকবে। মাঝে মাঝে পিঠে হালকা চাপ দিতে হবে। এতে গিলে খাওয়া পানি বের হয়ে আসবে। মুখে যদি জলজ উদ্ভিদ ঢোকে তাও বের হয়ে আসবে।
খ. কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
গ. ভেজা কাপড় খুলে ফেলতে হবে।
ঘ. মেডিকেল সাহায্য না পাওয়া পর্যন্ত কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যেতে হবে।
 

বয়স্ক লোক হলে
ক. প্রথমে রোগীর গলা,মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
খ. রোগীর হাঁটু ভাঁজ করে চেয়ার বা টুলের উপর এমনভাবে বসাতে হবে যেন মাথা ঝুলে থাকে। পিঠে হালকা চাপ দিলে গিলে খাওয়া পানি বের হয়ে আসবে ।
গ. ভেজা কাপড় খুলে ফেলতে হবে।
ঘ. মেডিকেল সাহায্য না পাওয়া পর্যন্ত কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যেতে হবে।
 

২. কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস ক্রিয়া : রোগীর শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে তখন কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসক্রিয়া চালু করতে হয় তাকে কৃত্রিম শ্বাসক্রিয়া বলে। কৃত্রিম শ্বাসক্রিয়া হাত দিয়ে বা যন্ত্রের সাহায্যে দেওয়া হয়। হাত দ্বারা চাপ দিয়ে কৃত্রিম শ্বাসক্রিয়ার লক্ষ হচ্ছে যাতে রোগীর ফুসফুসে মিনিটে ১০-১২ বার ছোট ও বড় করা যায়। ছোট হওয়ার সাথে সাথে ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যায় একে বলে নিঃশ্বাস। বড় হলে বাতাস প্রবেশ করে, একে বলে প্রশ্বাস। কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার কয়েকটি প্রচলিত পদ্ধতি আছে। বহুল প্রচলিত পদ্ধতিগুলো হলো-
 

১. সেফার (Schafer) পদ্ধতি।
২. সিলভেস্টার (Silvesters) পদ্ধতি।
৩. হোলজার নিলসন (Holger Neilson) পদ্ধতি।
৪. মুখে মুখ লাগানো (Mouth to Mouth) পদ্ধতি।
 

১. সেফার পদ্ধতি : রোগীকে উপুড় করে শোয়াতে হবে। তার মুখ থাকবে নিচের দিকে। হাত দুটি মাথার দু'পাশে ছড়ানো থাকবে। মাথা এক পাশ করে দিতে হবে যাতে তার নাক মাটিতে লেগে না থাকে। পরনের কাপড় চোপড় খোলার জন্য সময় নষ্ট করা উচিত নয়। প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী রোগীর মাথার দিকে মুখ করে কোমর বরাবর সমান্তরাল হয়ে পাশে হাঁটু গেড়ে বসবে। তারপর রোগীর কোমরের দু'পাশে নিজের দুটি হাত এমনভাবে রাখতে হবে যাতে বৃদ্ধাঙ্গুলি দুইটি সামনের দিকে এবং অন্য আঙ্গুলগুলো কোমরের দুই পাশে আড়াআড়িভাবে ছড়িয়ে থাকবে। নিজের হাত দুটি এবং কনুই ঠিক সোজা রাখতে হবে। তারপর কনুই না বাঁকিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে চাপ দিতে হবে। এ চাপ পেটের সমস্ত অস্ত্রে পড়বে এবং ফুসফুসের বায়ু বেরিয়ে আসবে। তারপর ধীরে ধীরে চাপ ছেড়ে দিতে হবে। চাপ দেওয়া এবং ছাড়া এ দুটি কাজ ৫ সেকেন্ডের ভিতর করতে হবে। চাপ দিতে ২ সেকেন্ড ও ছাড়তে ৩ সেকেন্ড এই মোট ৫ সেকেন্ড। যতক্ষণ শ্বাস ক্রিয়া স্বাভাবিক না হয় ততক্ষণ এ প্রক্রিয়া চলবে।

২. সিলভেস্টার পদ্ধতি : রোগীকে প্রথমে চিৎ করে শোয়াতে হবে। রোগীর ঘাড়ের নিচে একটি ছোট বালিশ দিতে হবে। মাথাটা বালিশের উপর এমনভাবে রাখতে হবে যেন মাথা সামনের দিকে থাকে। জামা কাপড় খুলে ফেলতে হবে। জিহ্বা উল্টে যেন বাতাস বন্ধ করে না দেয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। রোগীকে শুইয়ে দুই হাত দিয়ে তার কনুই দুটি সজোরে উপরের দিকে টেনে তুলতে হবে। তারপরে সজোরে কনুই দুটি বুকের দুপাশে রাখতে হবে। যাতে বুকের দু'পাশে চাপ পড়ে। এভাবে একবার চাপ পড়বে আবার চাপ ছাড়তে হবে। মোট সময় ৫ সেকেন্ড। নাকের কাছে এক টুকরা কাগজ ধরে দেখতে হবে শ্বাস পড়ছে কি না? শ্বাস ক্রিয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ক্রিয়া চলতে থাকবে।

৩. হোলজার নিলসন পদ্ধতি : রোগীকে উপুড় করে শোয়াতে হবে।

ক. প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী রোগীর মাথার দিকে হাঁটু ভাঁজ করে বসবে।
খ. রোগীর পিঠে চাপ দিতে হবে। তারপর রোগীর বাহু দুটি উঠা-নামা করাতে হবে। মনে রাখতে হবে যদি শোল্ডার জয়েন্ট বা তার কাছাকাছি কোথাও অস্থিভাঙ্গা থাকে তাহলে এ পদ্ধতি চলবে না। 

চাপ দেয়ার নিয়ম-
 

এক, দুই— পিঠে চাপ সৃষ্টি
তিন- একটু থামতে হবে
চার, পাঁচ— বাহুতে টান সৃষ্টি
হয়— কিছুক্ষণ থাম।
এই প্রক্রিয়ায় রোগীকে প্রতি মিনিট ১০/১২ বার শ্বাস প্রশ্বাস দেওয়া যায়। প্রতিবারে বাতাস চলাচলের পরিমাণ ১ লিটার।
 

৪. মুখে মুখ লাগানো পদ্ধতি : কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসের একটি সহজ পদ্ধতি হলো মুখে মুখ লাগানো পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ফুসফুসে বাতাস ঢোকানো যায়। এ পদ্ধতি খুবই সহজ ও পরিশ্রমও কম। অল্প বয়স্করাও সহজে এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবে। তবে নৈতিক দিক দিয়ে এ পদ্ধতি অনেক সময় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রশ্বাস না পেলে এই ধরনের প্রক্রিয়া বহু আগে থেকে চালু আছে। মূলত প্রতিবিধানকারীর লক্ষ্যই হলো যে কোনো উপায়ে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। মুখের ভিতরে ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার করে, এক হাত দিয়ে রোগীর মাথা চেপে ধরে, অপর হাত নিম্ন চোয়াল ধরে মুখ ফাঁক করে নিজে শ্বাস পুরো গ্রহণ করে রোগীর মুখ ঠোঁট দিয়ে আটকে ধরে বাতাস ঢোকাতে হবে। এভাবে ১০-১২ বার বুক ফুলানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

Content added By
Promotion